নিজস্ব প্রতিবেদক :
গণ অধিকার পরিষদের সভাপতি ও ডাকসুর সাবেক ভিপি নুরুল হক নূর বলেছেন, আআমরা এই চট্টগ্রামের গণ অধিকার পরিষদসহ রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ, রাজনেতিক সচেতন মানুষকে বলতে চাই ৫৩ বছর আমরা রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দকে দেখেছি। আমরা অন্তত প্রফেসর ড. ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তীকালিন সরকারকেও আরও দুয়েক বছর দেখি, তারা কি করে?
শুক্রবার (২২ নভেম্বর) বিকালে চট্টগ্রাম লালদিঘী মাঠে সংগঠনটি আয়োজিত তারুণ্যের সমাবেশে তিনি এ কথা বলেন। সমাবেশে সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক রাশেদ খাঁনসহ কেন্দ্রীয়, মহানগর, বিশ্ববিদ্যালয় ও জেলার নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
নুরুল হল নূর বলেন,আমাদের দৃঢ বিশ্বাস ড. ইউসূস সারা পৃথিবীব্যাপী তার যেই পরিচিতি তিনি এই ভঙ্গুর বাংলাদেশকে তুলে আনতে পারবে। ইতিমিধ্যে ১৫টি সংস্কার কমিশন করে দেওয়া হয়েছে। নির্বাচন, সংবিধান, প্রশাসন, বিচার ব্যবস্থা এগুলো সংস্কার এই গণ আন্দোলনের আখাঙ্কা। এই সংস্কার ছাড়া কোন নির্বাচন হবেনা।
তিনি বলেন, ৫৩ বছরের রাস্ট্র ব্যবস্থা ব্যর্থ এবং অকার্যকর হয়েছে বিধায় এই রাস্ট্র ব্যবস্থা সংস্কার করতে, নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্ত করতেই অদম্য সাহস নিয়ে একটি ফ্যাসিস্ট শক্তির বিরুদ্ধে লড়াই করেছে এবং এই ছাত্র জনতা জীবন দিয়েছে। ছাত্র জনতা সেক্রিফাইস করেছে যার ফলে আজ এই পরিবর্তিত বাংলাদেশ আমরা দেখতে পাচ্ছি।
তিনি আরও বলেন, কোন রাজনৈতিক দলের ডাকে বা নেতৃত্বে ছাত্র জনতা এই অভ্যুত্থানে অংশ নেয়নি। ছাত্ররা ডাক দিয়েছে কোট বৈষম্য নিয়ে। এরপর ছাত্রদের উপর গুম, খুন, গুলি, অত্যাচার, নির্যাতন শুরু হয়। দেশের জনতা তাদের সাথে সহমত পোষণ করে রাস্তায় নেমে আসতে বাধ্য হয়েছিল। এতোদিন ফ্যাসিস্ট দ্বারা পরিচালিত এই রাস্ট্র কাঠামো সংস্কার না হওয়া পর্যন্ত, রাস্ট্র ব্যবস্থার পরিবর্তন ব্যতিত কোন নির্বাচন হওয়া যাবেনা, হতে পারেনা।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংসদের সাবেক ভিপি নুরুল হক নূর আরও বলেন, অবশ্যই সরকারকে ক্ষমতায় থাকার প্রশ্নে আমরা ব্ল্যাঙ্ক চেক দেব না। আমরা আপনাদের পারফর্মেন্সের উপর ভিত্তি করে অটো রিনিউয়াল সময় দিব। অর্থাৎ আপনারা ভালো কাজ করলে আমাদের সমর্থন পাবেন। গণবিরোধী কর্মকাণ্ড করলে, জনগণের বিরুদ্ধে অবস্থান নিলে এক সেকেন্ডও সময় নিব না আপনাদের বিরুদ্ধে দাাঁড়াতে।
তিনি আরও বলেন, আমরা যেই সুযোগ পেয়েছি তা ৫৩ বছরে একটিবার আমরা আমাদের এই সুযোগ পেয়েছি। এই সুযোগ হেলায়-পেলায় নষ্ট করা যাবে না। রাতারাতি নির্বাচন হলে এই ব্যবস্থার পরিবর্তন হবে না। সংবিধান পরিবর্তনের দাবি এসেছে। সংবিধান নির্বাচিত সরকারও পরিবর্তন করবে, অন্তর্বর্তীকালিন সরকারও পরিবর্তন করবে।
তিনি বলেন, এই সরকারে ম্যান্ডেট নাই এই কথার ভিত্তি নাই। ইতিহাসের সবচেয়ে বড় ম্যান্ডেট নিয়ে লেন্সনায়েক ভিক্টোরি নিয়ে এই সরকার গঠিত হয়েছে। কেননা বিএনপি, জামায়াত, বাম, ডান সব দলের সমর্থন রয়েছে এই সরকারের প্রতি। এই ভিক্টোরি হচ্ছে ছাত্র জনতার ইতিহাস সৃষ্টিকারী গণঅভ্যত্থান।
নূর বলেন, এই গণঅভুত্থানে যারা হত্যাযজ্ঞ চালিয়েছেন, নির্যাতন, নিপীড়ন চালিয়েছেন। সেই দল আওয়ামী লীগকে রাজনীতিতে আনতে, তাদেরকে পুনর্বাসন করার কথা কোন রাজনৈতিক দল বলছেন। আমরা এমপি, মন্ত্রী হতে, ক্ষমতায় বসতে জীবন দিইনি। গণ অধিকার পরিষদেরও ১৩ জন নেতাকর্মী শহীদ হয়েছেন। আমাদের এমন কোন নেতাকর্মী নাই যারা ছাত্রলীগ, যুবলীগ দ্বারা নির্যাতিত হয় নাই।
আওয়ামী লীগ প্রশ্নে এক বিন্দুও ছাড় দেওয়া হবে না বলে জানিয়ে গণ অধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নূর আরও বলেন, আওয়ামী লীগকে পুনর্বাসনের পক্ষ যে নিবে আমরা ধরে নিব সেই ফ্যাসিবাদের দোসর। আওয়ামী লীগকে প্রতিহতের জন্য আবার যদি ডাক দিতে হয় এই চট্টগ্রাম থেকেই গণ অধিকার পরিষদের নেতাকর্মীরা প্রস্তুত থাকবে এবং সেই ডাক দিবে।
তিনি বলেন, আমরা সরকারকে বলতে চাই দায়সারা কথাবার্তা বলে ছাত্র জনতার সাথে প্রহসন করবেন না। আপনারা বলেছেন, দুয়েকটি রাজনৈতিক দল চায় আওয়ামী লীগ নির্বাচনে আসুক। ছাত্র জনতার রক্তের উপর পা দিয়ে আওয়ামী লীগ নির্বাচনে আসবে আর আমরা কি আঙ্গুল চুষব? আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে গণ প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। প্রত্যেকটি পাড়া মহল্লায় আওয়ামী লীগের নাম যারা মুখে নিবে তাদেরকেই প্রতিহত করা হবে।
এসময় তিনি আরও বলেন, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের খসড়া আইনে দল হিসেবে আওয়ামী লীগের বিচার করার বিধান না রাখার সিদ্ধান্তকে আমরা ঘৃণা জানাই এবং নিন্দা জানাই। এসশয় আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করতে এবং বিচারের দাবিতে শীঘ্রই ঢাকায় মহাসমাবেশ করার কথা জানান ভিপি নূর। তিনি চট্টগ্রামের নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে আরও বলেন, আপনারা আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে কর্মসূচী ঘোষণা করেন। তিনি বলেন, আমরা অবশ্যই রিফর্ম, রিকনসিলেশন চাই, একটি নতুন রাজনৈতিক পরিবেশ চাই, কিন্তু তার মানে এই নয় যে আমাদের ভাইদের রক্তে যাদের হাত লাল হয়েছে তাদের সাথে হ্যান্ডশেক করব। এতো তাড়াতাড়ি এই নির্মম নির্যাতন, হত্যাযজ্ঞ চোখের সামনে ভেসে আসছে। রাতে ঘুমাতে দেয় না, ট্রমাটাইজয হয়ে যায়। এই স্মৃতি এতো তাড়াতাড়ি ভুলে যেতে পারব না। এসময় তিনি সব দলকে আওয়ামী লীগ প্রশ্নে অবস্থান পরিস্কার করার কথা জানান।
তিনি বলেন, ভুলে যাবেন না ১৫-১৬ বছর ধরে আওয়ামী লীগকে হঠাতে রাজনৈতিক দলগুলো চেষ্টা করেছিল। হালে পানি পায় নাই। ককটেল ফুটালেই সমাবেশ পন্ড। আর খুনের মুখে দাঁড়িয়ে সুসংগঠিত প্রশিক্ষিত বাহিনীর বিরুদ্ধে বুক চেতিয়ে খান খান জীবন দিয়েছেন আবু সাঈদ, মুগ্ধ আর ওয়াসিমরা। তাদের রক্তের উপর আওয়ামী লীগের রাজনীতি এদেশে প্রতিষ্ঠিত হতে দেব না, দেব না দেব না।